স্প্রেডশিট সফটওয়্যার ও তার মৌলিক কাজ

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন-১ - কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার | | NCTB BOOK

স্প্রেডশিট (Spread Sheet) : শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো ছড়ানো পাতা (Spread অর্থ ছড়ানো এবং Sheet অর্থ পাতা)। সুবিশাল স্প্রেডশিটের যে অংশে কাজ করা হয় তাকে ওয়ার্কশিট বলা হয়। মূলত: এক বা একাধিক ওয়ার্কশিট নিয়েই তৈরি হয় একটি ওয়ার্কবুক। একটি খাতায় যেমন কয়েকটি পৃষ্ঠায় লেখা যায় তেমনি ভিন্ন ভিন্ন ওয়ার্কশিট খুলে সেখানে কাজ করা যায়। ওয়ার্কবুকে ডেটা ও ইনফরমেশন সংরক্ষণ ও প্রয়োগ করা হয়।

III. স্প্রেডশিট/ওয়ার্কশিট এ্যানালাইসিস প্রোগ্রামের বৈশিষ্ট্য

১. সেলের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন : স্প্রেডশিটের একটি সেলকে অপর একটি সেলের সাথে সম্পর্কযুক্ত করা যায়। অর্থাৎ একটি ঘরের মান পরিবর্তিত হলে ঐ ঘরের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য ঘরের মানও স্বয়ংক্রিয় ভাবে পরিবর্তিত হয়।

২. শিটের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন : স্প্রেডশিটে একটি ওয়ার্কশিটের সাথে অপর একটি ওয়ার্কশিটের সম্পর্ক স্থাপন করা যায়। এক্ষেত্রে একটিতে পরিবর্তন হলে ঐ ওয়ার্কশিটের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য শিটের মানও স্বয়ংক্রিয় ভাবে পরিবর্তিত হয়।

৩. স্বয়ংক্রিয় ফর্মুলার ব্যবহার : স্প্রেডশিটে অনেক আধুনিক এবং এতে স্বয়ংক্রিয় ফর্মুলা ব্যবহার করা যায়।

৪. ফাংশনের ব্যবহার : বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য স্প্রেডশিট প্রোগ্রামে ৯টি ক্যাটাগরিতে মোট ৪৮৫টি ফাংশন রয়েছে। এদের সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যাকে খুব সহজে সমাধান করা যায়। তাছাড়া ব্যবহারকারীরা ইচ্ছা করলে প্রয়োজনীয় ফাংশন তৈরি করে নিতে পারে ।

৫. ম্যাক্রো এর ব্যবহার : স্প্রেডশিটে রয়েছে ম্যাক্রো ব্যবহারের সুবিধা এবং ব্যবহারযোগ্য ম্যাক্রো। একই কাজ বারবার করতে হয় এমন সব কাজের সমষ্টিকে Macro তৈরির মাধ্যমে একটি Single Action- এ রূপান্তর করে পরবর্তীতে যতবার ইচ্ছা ব্যবহার করা যায়।

৬. শর্তের সহজ বিশ্লেষণ : সঠিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য অনেক সময় গাণিতিক বিশ্লেষণের পাশাপাশি যুক্তিগত সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়। স্প্রেডশিট এখানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। 

৭. সেলের সাইজ পরিবর্তন : স্প্রেডশিটে ইচ্ছামতো সেলের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ পরিবর্তন করা যায় ।

৮. গ্রাফ বা চার্টের ব্যবহার: স্প্রেডশিটে গ্রাফ বা চার্ট ব্যবহারের মাধ্যমে খুব আকর্ষণীয়ভাবে তথ্যকে উপস্থাপন করা যায়।

৯. ডেটাবেজের ব্যবহার : স্প্রেডশিটে অন্য কোনো ডেটাবেজ প্রোগ্রামে ব্যবহৃত ফাইল নিয়ে কাজ করা যায়। ফলে দক্ষ ডেটাবেজ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তথ্যের দ্রুত নির্ভুল এবং কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায়।

১০. বিভিন্ন রকম ফন্টের ব্যবহার : ডকুমেন্টের আকর্ষণীয়তা এবং বৈচিত্রতা বাড়ানোর জন্য এখানে নানা রকম ফন্ট ব্যবহার করা যায়।

১১. ছবি ও শব্দের সংযোজন : তথ্যকে সহজে বোঝানোর জন্য এখানে নানারকম ছবি ও শব্দ সংযোজন করা যায়।

▪️ স্প্রেডশিট উপস্থাপনার বৈশিষ্ট্য

১. শব্দের বিভিন্ন ধরনের আকার আকৃতি ও রংয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফন্ট ব্যবহার করা যায়।

২. সেলের সাইজ পরিবর্তন করে শব্দ বা সংখ্যাকে সেলের যে কোনো স্থানে স্থাপন করা যায়। 

৩.কোন নির্দিষ্ট সেল বা কোনো Drawing কিংবা কোনো নির্দিষ্ট Topic এর উপর সাত (৭) রকম বর্ডারব্যবহার করা যায় । 

৪. সেল, রেঞ্জ, কলাম বা সারি কিংবা কোনো Topic কে নির্দিষ্ট এরিয়াতে স্থাপন করে এতে বিভিন্ন Shade দেওয়া যায়। 

৫. নিজের ইচ্ছামতো পিকচার তৈরি করে ব্যবহার করা যায়।

৬. বিভিন্ন ধরনের চার্ট তৈরি করে এতে লিজেন্ড, লেখা, তীর, প্যাটার্ন ও বিভিন্ন ধরনের Symbol ব্যবহার করা যায়।

৭.স্প্রেডশিটের সাথে অডিও/ভিডিও যুক্ত করা যায়। 

৮. একটি পূর্ণাঙ্গ ডেটাকে বিভিন্ন Sub-data তে ভাগ করা যায়।

৯. তাৎক্ষণিকভাবে চার্টের ভিউ দেখে পরিবর্তন করা যায়। 

১০. সংক্ষিপ্ত বা ওয়ার্কশিটের নির্দিষ্ট অংশের জুম নেওয়া যায়।

স্প্রেডশিটের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার

কম্পিউটারের কীবোর্ডকে কলমের মতো ব্যবহার করে স্প্রেডশিটে বিভিন্ন আক্ষরিক ও গাণিতিক তথ্য লেখা যায়। গাণিতিক তথ্যগুলোকে বিভিন্ন ফর্মুলা ও ফাংশন ব্যবহার করে হিসাব-নিকাশ করা যায়। এক কথায় হিসাব সংক্রান্ত প্রায় সমস্ত কাজই স্প্রেডশিটে করা যায়। তবে মোটামুটিভাবে স্প্রেডশিটের সাহায্যে আমরা সাধারণত যে কাজগুলো করে থাকি তা হলো-

১. দৈনন্দিন হিসাব সংরক্ষণ তৈরি করা;

২. ডেটা সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা;

৩. বার্ষিক প্রতিবেদন প্রণয়ন ও বাজেট প্রণয়ন করা;

৪. ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় যাবতীয় হিসাব বিষয়ক বিশ্লেষণ করা;

৫. আয়কর ও অন্যান্য হিসাব তৈরিকরণ করা; 

৬. বৈজ্ঞানিক ক্যালকুলেশন করা;

৭. বেতনের হিসাব তৈরিকরণ করা;

৮. মজুদ পরিমাণ ও নিয়ন্ত্রণ করা; 

৯. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন সংক্রান্ত হিসাব

১০. এয়ারলাইন্স রিজার্ভেশন তৈরি করা;

১১. নির্বাচনের ভোট গণনায়;

১২. খেলোয়াড়ের প্রদর্শিত ক্রীড়াকৌশল মূল্যায়নে;

১৩. গাণিতিক, ত্রিকোনমিতিক এবং পরিসংখ্যানিক ফাংশন ব্যবহার করা ;

১৪. বিভিন্ন ধরনের আর্থিক ব্যবস্থাপনা;

১৫. তথ্যকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপনের জন্য বিভিন্ন ধরনের চার্ট বা গ্রাফ তৈরি করা;

১৬. ম্যাক্রো ব্যবহার করে কোনো কাজ রেকর্ড করে পরবর্তীতে তা বারবার ব্যবহার করা ইত্যাদি।

Content added || updated By
Promotion